ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing):
ফ্রিল্যান্সিং হল এমন একটি কাজ যা কোন ব্যক্তি কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকেও মুক্তভাবে ঐ প্রতিষ্ঠানের জন্য করতে পারেন এবং এই কাজের বিনিময়ে ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন। ফ্রিল্যান্সিং কে বাংলায় মুক্তপেশা বলা হয়। আর মুক্ত পেশাজীবীদের বলা হয় ফ্রিল্যান্সার। ১৮১৯ সালে ওয়াল্টার স্কট নামক এক লেখকের বই হতে প্রথম ফ্রিল্যান্সার শব্দটি পাওয়া যায়। আধুনিক যুগে সাধারনত ফ্রিল্যান্সারগণ বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ গ্রহণ করেন এবং নিজের ঘরে বসে ঐ কাজ সম্পূর্ন করেন।
যে কোন ধরনের কাজই ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য বেছে নেওয়া যায়। তবে গ্রাফিক্স ডিজাইন, শোস্যাল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO), কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও ইডিটিং, আর্টিকেল রাইটিং ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয় কাজ ফ্রিল্যান্সিং জগতে।
ফ্রিল্যান্সিং কেন করবেন?
বাংলাদেশে চাকরি পাওয়া কতটা কঠিন তা আমরা কম বেশি সবাই জানি। তাছাড়া বাংলাদেশে যেমন ছোট খাট কাজ করাতে শ্রমিক রাখলে তাকে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। তেমনি কিছু কিছু দেশ আছে যেখানে সাধারণ কাজের জন্য শ্রমিকদের নূন্যতম বেতন ২-৩ লাখ টাকা।
সেক্ষেত্রে দেখা যায় চালাক মালিকরা নিজেদের অর্থ বাচাতে কাজগুলো অনলাইনে ফ্রিলান্সারদের মাধ্যমে করিয়ে নেন। এক্ষেত্রে আপনি যেমন বাংলাদেশে থেকে ৫০ হাজার বা ১ লাখ টাকা বেতন পেয়ে খুশি থাকেন তেমনি বায়ার তার ৩ লাখ টাকার কাজ ১লাখ টাকায় করিয়ে নিতে পারে।
নতুনদের জন্য কিছু কথাঃ
ফ্রিল্যান্সিং-এ আপনার ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য আপনার প্রথমে উপরের কাজগুলোর যেকোন ৩-৪টি কাজ খুব ভালো করে শিখে নিতে হবে। কাজগুলো শিখতে আপনি ইউটিউব থেকে সাহায্য নিতে পারেন বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকেও শিখতে পারেন। MSB Academy অনেকের পছন্দের নাম ফ্রিল্যান্সিং কাজ শেখার ক্ষেত্রে।


এরপর আপনাকে ফাইভার অ্যাকাউন্ট বা ফ্রিলান্সার অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট আছে তার মধ্যে ফাইভার এবং ফ্রিল্যান্সার এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও প্রয়োজন হবে একটি পেপাল অ্যাকাউন্ট বা পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট এর।
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গঠন করতে গেলে প্রথম দিকে কাজ পেতে অনেক অসুবিধা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কাজ জানার পরও অভিজ্ঞতা এবং রিভিউ না থাকায় কাজ পাওয়াটা একটা দুঃসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যারা আগে থেকে কাজ করছে, যাদের ভাল অভিজ্ঞতা আছে বায়াররা তো তাদেরকেই কাজ দেবে।
আপনি তো নতুন ফ্রিল্যান্সিং এর কোন অভিজ্ঞতা নাই, কোন রিভিউ বা ফিডব্যাক বা কোন কাজের স্যাম্পল নেই। তাহলে বায়াররা আপনাকে কি দেখে কাজ দেবে? কেন দিবে? আদৌ দিবে কিনা? নতুনদের মাথায় এই প্রশ্নগুলো খুরপাক খেতে থাকে। জব পাচ্ছেন না কারণ অভিজ্ঞতা নেই। অভিজ্ঞতা তৈরী হচ্ছে না কারণ জব পাচ্ছেন না। এই দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়ার উপায় কি?
১. যে সকল বায়ার কম টাকায় কাজ করাতে চায় তারা শুধুমাত্র নতুনদেরকেই কাজ দেয় । কারণ পুরাতন ফ্রিলান্সিং এক্সপার্টরা কখনো অল্প টাকায় কাজ করবে না। আপনার অভিজ্ঞতা হওয়ার পর আপনিও কম টাকায় কাজ করবেন না । শুরুতে কয়েকটি কাজ কম টাকায় করে দিন ।
নতুন অবস্থায় বায়ার আপনাকে কত টাকা দিলে তা মোটেও গুরুত্বপূর্ণ না বরং সে আপনার সম্পর্কে কি পাবলিক রিভিউ দিল তাই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভাল রিভিউ আরো দশটি কাজ পাওয়ার পথ তৈরী করবে। তো নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কম টাকায় কাজ শুরু করলেও ক্ষতি নেই বরং আরও ভাল।
২. কিছু কিছু কাজ এমন থাকে যে সেগুলোতে কোয়ালিটি গুরুত্বপূর্ণ না। খুবই সহজ কিছু কাজ যেগুলো করতে কোন স্কীল্ড প্রফেশনাল প্রয়োজন হয় না। এই রকম কাজগুলো বায়াররা কম টাকায় নতুনদেরকে দিয়ে করিয়ে নেয়। এই কাজগুলোকে প্রথমদিকে আপনার টারগেট করা উচিত।
৩. কাজের স্যাম্পল একটি গুরুত্বপূর্ণবিষয়। আপনাকে যে বায়ার কাজ দেবে সে কাজ দেওয়ার আগে আপনার কাজের স্যাম্পল দেখতে চাইবে । তাই কাজ পেতে হলে আগে স্যাম্পল তৈরী করতে হবে । কাজটি ভালভাবে শেখার পর তার বেশ কয়েকটি কপি তৈরি করে রাখুন। এই স্যাম্পল গুলো আপনাকে চাকরি পেতেও সাহায্য করবে।
তবে স্যাম্পলগুলো অবশ্যই ভাল হতে হবে। তাই খুবভালভাবে কাজটি শেখার পরই স্যাম্পল তৈরী করুন। সাথে নিজের নামে ওয়েবসাইট থাকলে আরও ভাল হয়।
৪. বায়ার যদি দেখে যে আপনার অভিজ্ঞতা নাই তখন সে আপনার সাথে চ্যাট করে বুঝার চেষ্টা করে ”কলসি খালি না ভর্তি”। তাই পরিপূর্ণভাবে ভাবে কলসি ভর্তি করেই কাজ এপ্লাই করুন । বায়ার যখন দেখবে যে এই ব্যাপারে আপনার পর্যাপ্ত জ্ঞান আছে তখন অভিজ্ঞতা না থাকলেও হায়ার করে। তবে প্রথম কিছুদিন সেলারী একটু কম দিতে পারে।
৫. প্রথম এক-দুই মাস টাকা ইনকামের জন্য কাজ না করে শুধুমাত্র ভাল রিভিউর জন্য কাজ করুন। ৪/৫ টি ভাল রিভিউ পেলে পরবর্তিতে বায়াররা আপনাকে বিশেষ সম্মান ও গুরুত্ব দিয়ে চ্যাট করবে। কাজ পাওয়াটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
৬. এইভাবে ৮/১০ টি কাজ ভালভাবে করতে পারলে এবং ভালো রিভিউ থাকলে বায়াররা খুব সহজেই আপনাকে কাজ দেবে। প্রোফাইলে অন্যদের রিভিউ দেখেই বায়ার নিশ্চিন্ত হয় যে এই ফ্রিল্যান্সারেকে যাচাই করার কোন দরকার নেই।
তখন খুব সহজেই কাজের ইন্সট্রকশন ও প্রয়োজনীয় রিসোর্স দিয়ে হায়ার করে চলে যায়। কারন সে নিশ্চিত যে আপনি ভালভাবে কাজ জানেন। আপনি কখনোই চাইবেন না আপনার অনেক পরিশ্রমের ফসল এই প্রফাইলে কোন ব্যাড কমেন্ট পড়ুক।
৭. এইভাবে যখন ৩০/৪০ টি কাজ কম্পিলিট করবেন তখন অনেক বায়ার আপনাকে তার কোম্পানীতে স্থায়ীভাবে কাজ করার জন্য ইনভাইট করবে। স্থায়ী চাকরীতে মিমিমাম বেতন ১২০০ ডলার। যেটা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি। ওদের জন্য খুবই কম বেতন কিন্তু আমাদের জন্য অনেক বেশী। এটাই হল আসল ফ্রিল্যান্সিং। কিন্তু আপনি এই রকম চাকরী করতে পারবেন একটি বা দুইটি। মনযোগ দিয়ে করতে থাকুন ।
৮. এইভাবে যখন বেশ কয়েক মাস কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জিত হলে আপনি অনেকগুলো কোম্পানীর কাজ নিয়ে আপনার অধীনে কয়েকজন লোক নিয়োগ দিয়ে কাজ করাতে পারবেন। কোন কর্মিকে দশ হাজার টাকা বেতন দিয়ে এক লাখ টাকার কাজ করিয়ে নিতে পারবে। আপনার কাজ হল শুধুমাত্র বায়ারের সাথে ডিল করা। কাজ নেয়া আর জমা দেয়া। কাজ করবে আপনার কর্মী।
তবে কাজের ক্রিটিক্যাল বিষয়গুলো তারা করতে পারবে না অবশ্যই আপনাকেই করতে হবে। বায়ার দেখবে তার কাজটা সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা। সম্পূর্ণ কাজ আপনি নিজে করছেন নাকি অন্য কাউকে দিয়ে বেশীরভাগ অংশ করিয়ে নিচ্ছেন তাতে তার কিছুই যায় আসে না। সে ভাল কাজ পেলেই খুশি।
আপনারা পেপারে বা টিভিতে যাদেরকে দেখেন প্রতি মাসে ৫/১০ লাখ টাকা ইনকাম করে তারা কেউ নিজের হাতে কাজ করে না , কাজ করায়। তবে সেই পজিশনে লিফটে করে যাওয়া যাবে না, ধীরে ধীরে সিড়ি দিয়ে উঠতে হবে।