কোষ নিউক্লিয়াস (Cell Nucleus):
একটি প্রাণী কোষের যদি একটি নিউক্লিয়াস থাকে তাকে মোনোক্যারিয়ন বলে। কোন প্রজাতির একটি কোষের একটি বিশুদ্ধ নিউক্লিয়াস থাকলে তাকে ইউক্যারিয়ন বলে। আর যদি কোন প্রজাতির একটি কোষের বিশুদ্ধ দুটি নিউক্লিয়াস থাকে তাকে তখন বলা হয় ডাইক্যারিয়ন। আর যদি কোন প্রজাতির একটি কোষে অনেকগুলো নিউক্লিয়াস থাকে তখন তাকে বলা হয় পলিক্যারিয়ন।
যদি কোন কোষে নিউক্লিয়াস না থাকে সেই কোষ বিভাজিত হতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মানুষের পরিনিত লোহিত রক্ত কণিকা তে নিউক্লিয়াস না থাকার কারণে ওই কোষ বিভাজিত হয় না। নিউক্লিয়াস সাইটোপ্লাজমীয় বস্তু থেকে পর্দা দিয়ে আলাদা থাকার কারণে নিউক্লিয়াসের নিজেদের একটি নিজস্ব জগৎ সৃষ্টি হয়। কোন জীব দেহের শরীরের কোষে পর্দা ঘেরা নিউক্লিয়াস থাকলে তাকে বলা হয় ইউক্যারিওটা। আর যে সকল জীব দেহের শরীরের কোষে পর্দাঘেরা নিউক্লিয়াস থাকে না তাদেরকে বলা হয় প্রোক্যারিওট। কোষ বিভাজনের বিভিন্ন সময়ে নিউক্লিয়াস তাদের গঠন বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করে।
নিউক্লিয়াস যে সকল রাসায়নিক উপাদান দ্বারা গঠিত তা হলো-
ডিএনএ (DNA) ৯/১২%
হিস্টোন প্রোটিন ১৫%
আরএনএ (RNA) ৫%
এসিড ৬৫%
বিভিন্ন খনিজ লবণ
একটি সুগঠিত এবং আদর্শ নিউক্লিয়াসের চারটি অংশে বিভক্ত থাকে।
নিউক্লিয়ার ঝিল্লি বা পর্দা
নিউক্লিওলাস
নিউক্লিওপ্লাজম
নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম বা ক্রোমাটিন জালিকা
নিউক্লিয়ার ঝিল্লি বা পর্দাঃ
নিউক্লিয়াসকে ঘিরে যে দ্বিস্তরি আবরণ থাকে বা নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমীয় বস্তু পৃথক করণ পর্দাকে নিউক্লিয়ার ঝিল্লি বলে। এটার মূল কাজ হলো নিউক্লিয়াসকে সাইটোপ্লাজমীয় বস্তু থেকে আলাদা রাখা। এটি দুটি স্তর থাকে। এই ঝিল্লি লিপিড ও প্রোটিন দ্বারা তৈরি। মাঝে মাঝে এই ঝিল্লি থেকে কিছু ছোট ছোট ছিদ্র দেখা যায় যাকে নিউক্লিয়ার রন্ধ্র বলা হয়।
নিউক্লিওলাসঃ
নিউক্লিয়াস এর ভিতর যে অধিক ঘন এবং অপেক্ষাকৃত ছোট ও গোলাকার যে বস্তু দেখা যায় তাকে নিউক্লিওলাস বলে। নিউক্লিওপ্লাজম এর ভিতরে ক্রোমোজোমের সাথে যে গোলাকার বস্তুটি দেখা যায় তাকি মূলত নিউক্লিওলাস বলে। নিউক্লিওলাস কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
তন্ত্রময়
দানাদার
মেট্রিক্স
নিউক্লিওলাস মূলত সংরক্ষন এবং সংশ্লেষণ এর কাজ করে থাকে। এরা আরএনএ (RNA) , প্রোটিন ও রাইবোজ সংশ্লেষণ করে। ও প্রোটিন সংরক্ষণ কাজও এরা করে থাকে। এটি নিউক্লিক এসিড ভান্ডার হিসেবেও কাজ করে।
নিউক্লিওপ্লাজমঃ
নিউক্লিয়াস ঝিল্লির ভিতরে জেলির মত যে বস্তু দেখা যায় তাকে নিউক্লিওপ্লাজম বলে। এখানে নিউক্লিক এসিড প্রোটিন এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ থাকে। এদের মূল কাজ হলো নিউক্লিয়াসের বিভিন্ন জৈবিক কাজে সাহায্য করা। যখন নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয় তখন এটি সেখান থেকে খাদ্য সংরক্ষণ করে।
নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম বা ক্রোমাটিন জালিকাঃ
কোষের এর বিশ্রাম কালে অর্থাৎ যখন কোষ কোন বিভাজন করে না তখন নিউক্লিয়াসের কেন্দ্রে সূক্ষ্ম সুতা মত পেচানো অংশই হলো নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম বা ক্রোমাটিন জালিকা। যখন কোষ বিভাজন হয় তখন এরা খাটো এবং মোটা হতে থাকে তখন তাদের আলেদা আলেদা ক্রোমোজোম হিসেবে দেখা যায়। এর মূল কাজ হলো বংশগতির ধারণ এবং বহন হিসেবে এটি কাজ করে। প্রকরণ সৃষ্টির কাজে এরা মূল ভূমিকা পালন করে থাকে।
নিউক্লিয়াসের কাজঃ
নিউক্লিয়াসে অনেক বিপাকীয় কাজ করে থাকে। যার জন্য এটিকে কোষের মস্তিষ্ক বলা হয় থাকে। এরা কোষ কে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও নিউক্লিয়াসে নিউক্লিয়ার এসিড ভান্ডার হিসেবে কাজ করে। নিউক্লিয়াস এর আরো কিছু বিশেষ কাজ হল RNA তৈরি করা রাইবোজ তৈরি করা বংশগতির ধারণ ও বহন ধরে রাখা ইত্যাদি। আমাদের দেহে প্রোটিন সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ এর মুখ্য ভূমিকা পালন করে। নিউক্লিয়াসে কোষ বিভাজনের সময় এটি খাদ্য সংরক্ষণ করে। নিউক্লিয়াসের মধ্যে বংশগত বৈশিষ্ট্য ধারণ থাকে। নিউক্লিয়াসের ডিএনএ এর মধ্যে বিভিন্ন বংশগতি বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম পর্যন্ত সংরক্ষণ থাকে।